শ্রবণ হানি বা কান শোনার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এটি একাধিক কারণে হতে পারে এবং এর ধরণও বিভিন্ন হতে পারে। শ্রবণ হানি ধীরে ধীরে হতে পারে অথবা হঠাৎ করেও শুরু হতে পারে, এবং এটি একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা শ্রবণ হানির বিভিন্ন ধরণ, কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।
শ্রবণ হানি কী?
শ্রবণ হানি হলো কান শোনার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সমস্যা। এটি বিভিন্ন মাত্রায় হতে পারে, যেমন হালকা, মাঝারি বা গুরুতর। শ্রবণ হানি এক কান বা দুই কানে হতে পারে এবং এটি কয়েকটি ধরণের হতে পারে।
শ্রবণ হানির ধরণ
কন্ডাকটিভ শ্রবণ হানি (Conductive Hearing Loss):
এটি ঘটে যখন কান পেরিফেরি বা মধ্য কানে কোনো সমস্যার কারণে শব্দ সঠিকভাবে ভিতরের কানে পৌঁছাতে পারে না।
কারণ: কানের পর্দার ছিদ্র, কানে পানি বা মোম জমা হওয়া, সংক্রমণ, বা মধ্য কানে প্রদাহ।
লক্ষণ: কানে চাপ অনুভূতি, শব্দ অস্বচ্ছ বা তীব্রতা কম অনুভব করা।
চিকিৎসা: সাধারণত চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
এটি ঘটে যখন শ্রবণ নার্ভ বা মস্তিষ্কের শ্রবণ কেন্দ্রের সমস্যা হয়, তবে কান সাধারণত স্বাভাবিকভাবে কাজ করে।
কারণ: মস্তিষ্কে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের সমস্যা।
লক্ষণ: শব্দের বিভ্রান্তি, কথার শব্দে বিভ্রান্তি, বা শব্দের মধ্যে সমস্যা বুঝতে না পারা।
চিকিৎসা: এটি সাধারণত শ্রবণ থেরাপি এবং অন্যান্য শিখন প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
শ্রবণ হানির কারণ এবং ঝুঁকি
শ্রবণ হানি হওয়ার বেশ কিছু কারণ এবং ঝুঁকি রয়েছে, যেমন:
বয়স (প্রেসবিকিউসিস): বয়স বাড়ার সাথে সাথে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
উচ্চশব্দে শোনা: দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চশব্দে শোনা শ্রবণ হানি সৃষ্টি করতে পারে।
জেনেটিক কারণ: কিছু মানুষ জন্মগতভাবে শ্রবণ হানির ঝুঁকিতে থাকতে পারে।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ: ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ শ্রবণ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
আঘাত বা ট্রমা: মাথায় আঘাত বা কানে আঘাত শ্রবণ হানির কারণ হতে পারে।
শ্রবণ হানির লক্ষণ
শ্রবণ হানির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
কথাবার্তা পরিষ্কারভাবে না শোনা বা বুঝতে না পারা।
অধিকাংশ সময় মানুষের কাছ থেকে প্রশ্ন শুনতে বা বুঝতে সমস্যা হওয়া।
টেলিভিশনের বা রেডিওর ভলিউম বেশি বাড়িয়ে রাখা।
কানে শোঁ শোঁ বা গুঞ্জন শোনা।
সামাজিক অবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি হওয়া বা একাকীত্ব অনুভব করা।
শ্রবণ হানির চিকিৎসা
শ্রবণ হানির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:
শ্রবণ যন্ত্র: সেন্সোরিনিউরাল শ্রবণ হানি এবং মিক্সড শ্রবণ হানির জন্য শ্রবণ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট: গম্ভীর সেন্সোরিনিউরাল শ্রবণ হানির জন্য কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
অস্ত্রোপচার: কন্ডাকটিভ শ্রবণ হানির জন্য কখনো কখনো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
শ্রবণ থেরাপি: অডিটরি প্রসেসিং ডিজঅর্ডারের জন্য শ্রবণ থেরাপি সহ অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর।
শ্রবণ হানি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি মানুষের জীবনযাত্রাকে অনেক প্রভাবিত করতে পারে। যদি আপনি শ্রবণ সমস্যায় ভুগছেন, তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করলে শ্রবণ হানি অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শ্রবণ হানি প্রতিরোধের জন্য উচ্চশব্দ থেকে দূরে থাকা এবং কান পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।