কানের সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা যা ছোটদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এটি বড়দেরও প্রভাবিত করতে পারে। কানের ভেতরে বা বাইরের অংশে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের আক্রমণে সংক্রমণ ঘটে, যার ফলে ব্যথা, শোঁ শোঁ শব্দ, অথবা শোনা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই আর্টিকেলে কানের সংক্রমণের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কানের সংক্রমণ কী?
কানের সংক্রমণ কানের ভেতরের বা বাইরের অংশে আক্রমণ ঘটায়, যা ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এটি তিনটি ধরনের হতে পারে:
আউটার ইয়ার ইনফেকশন (অ্যারেটাইটিস): কানের বাইরের অংশে সংক্রমণ।
মিডল ইয়ার ইনফেকশন (অটাইটিস মিডিয়া): কানের ভেতরের অংশে সংক্রমণ, যা সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ফলে হয়।
ইন্টারনাল ইয়ার ইনফেকশন: এটি খুবই বিরল, কিন্তু ভেতরের কানে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
কানের সংক্রমণের কারণ
কানের সংক্রমণের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ হলো:
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস: ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ কানের মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
অ্যালার্জি: অ্যালার্জি থেকেও কানে প্রদাহ হতে পারে, যা সংক্রমণে পরিণত হয়।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ: সর্দি বা ফ্লু কানের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
কানের আঘাত বা পানির প্রবাহ: কানে আঘাত বা অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হলে তা সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
কানের সংক্রমণের লক্ষণ
কানের সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
কানে তীব্র ব্যথা।
কানে শোঁ শোঁ বা গুঞ্জন শব্দ শোনা।
কানের বাইরে বা ভিতর থেকে পানি বের হওয়া।
শোনা কমে যাওয়া বা কানে ভেতর চাপ অনুভূত হওয়া।
জ্বর বা অস্বস্তি অনুভব করা।
শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত কান্না বা বিরক্তি দেখা দিতে পারে।
কানের সংক্রমণের চিকিৎসা
কানের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি আছে:
ঔষধ: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকস ব্যবহার করা হয়। ভাইরাল সংক্রমণের জন্য সাধারণত সাপোর্টিভ কেয়ার (বিশ্রাম, তরল পাণীয়) যথেষ্ট।
পেইন কন্ট্রোল: ব্যথা উপশম করার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইয়ার ড্রপস: কানে মৃদু ব্যথা বা প্রদাহের জন্য বিশেষ ড্রপস দেওয়া হয়।
টেম্পোরারি চিকিত্সা: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞরা কানের ভিতরের চাপ কমানোর জন্য মৃল্য চর্চা করতে পারেন।
কানের সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়
কানের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কিছু পরামর্শ:
কানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: কানের মধ্যে মোম জমা হয়ে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
পানি থেকে কানের সুরক্ষা: স্নান বা সুইমিং করার সময় কানে পানি প্রবাহিত হওয়া এড়াতে সতর্ক থাকতে হবে।
ধূমপান এড়িয়ে চলা: ধূমপান কানের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই এটি থেকে বিরত থাকা উচিত।
সঠিক চিকিৎসা নেওয়া: যেকোনো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা সর্দি-কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
কানের সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও যদি তা সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি গুরুতর হতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সঠিক পরিচর্যা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রয়োজন। কানের ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।